ঢাকা ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোনো আন্দোলন বা আলটিমেটামে তিনি পদত্যাগ করবেন না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৩০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম দিনের মতো শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। এদিকে গতকাল মুঠোফোনে উপাচার্য বলেছেন, কোনো আন্দোলন বা আলটিমেটামে তিনি পদত্যাগ করবেন না। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল রুমী স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এক অনুষ্ঠানে তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যের মধ্যে অনুক্ত একটি শব্দ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এর সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রয়াস নেয়। এতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়। গত ২৯ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যের কারণে কেউ আহত হয়ে থাকলে তার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

কিন্তু কতিপয় শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার নামে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনগুলোয় তালা মেরে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা সবার দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। শিক্ষার্থীরা গত সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে উপাচার্যের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অষ্টম দিনে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মাথায় ফিতা বেঁধে ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি-সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সকাল থেকে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের এক দফা এক দাবি। আর তা হলো উপাচার্যের অপসারণ। উপাচার্য ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে শিক্ষার্থীদের যে গালি দিয়েছেন, সে জন্য অবশ্যই তাঁকে সশরীর এসে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। তাঁদের দেওয়া আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে গতকাল। বাকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উপাচার্য ইমামুল হক গতকাল দুপুরে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিতেই পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বলেন তবেই আমি পদত্যাগ করব। আর নয়তো কোনো আন্দোলনই আমাকে আমার এই পদ থেকে পদত্যাগ করাতে পারবে না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারপরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো কারণ দেখছেন না। তাঁদের দিয়ে একটি গোষ্ঠী বা একটি চক্র আন্দোলন করাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে ওই গোষ্ঠী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন। এরপর গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।

অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের কথা জানানো হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কোনো আন্দোলন বা আলটিমেটামে তিনি পদত্যাগ করবেন না

আপডেট টাইম : ১১:০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম দিনের মতো শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। এদিকে গতকাল মুঠোফোনে উপাচার্য বলেছেন, কোনো আন্দোলন বা আলটিমেটামে তিনি পদত্যাগ করবেন না। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল রুমী স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এক অনুষ্ঠানে তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যের মধ্যে অনুক্ত একটি শব্দ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এর সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রয়াস নেয়। এতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়। গত ২৯ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যের কারণে কেউ আহত হয়ে থাকলে তার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

কিন্তু কতিপয় শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার নামে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনগুলোয় তালা মেরে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা সবার দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। শিক্ষার্থীরা গত সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে উপাচার্যের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অষ্টম দিনে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মাথায় ফিতা বেঁধে ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি-সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সকাল থেকে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের এক দফা এক দাবি। আর তা হলো উপাচার্যের অপসারণ। উপাচার্য ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে শিক্ষার্থীদের যে গালি দিয়েছেন, সে জন্য অবশ্যই তাঁকে সশরীর এসে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। তাঁদের দেওয়া আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে গতকাল। বাকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উপাচার্য ইমামুল হক গতকাল দুপুরে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিতেই পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বলেন তবেই আমি পদত্যাগ করব। আর নয়তো কোনো আন্দোলনই আমাকে আমার এই পদ থেকে পদত্যাগ করাতে পারবে না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারপরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো কারণ দেখছেন না। তাঁদের দিয়ে একটি গোষ্ঠী বা একটি চক্র আন্দোলন করাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে ওই গোষ্ঠী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন। এরপর গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।

অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের কথা জানানো হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।